ঢাকায় ও দেশের বিস্তৃত অঞ্চলে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। নরসিংদী ছিল উৎপত্তিস্থল। বহুতলে আতঙ্ক ছড়ালেও কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ভারতেও কম্পন অনুভূত হয়। বিস্তারিত জানতে পড়ুন।
ঢাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প: আতঙ্কে নগরবাসী
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট। হঠাৎ হালকা দুলে ওঠে ঢাকা শহর। কয়েক সেকেন্ডের মাঝারি কম্পনে আচমকা ভবন থেকে নেমে আসতে শুরু করেন মানুষ। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানায়, এটি ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার ঘোড়াশাল থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার এবং কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে।
এই কম্পন শুধু ঢাকায় নয়-চাঁদপুর, বরিশাল, বগুড়া, সীতাকুণ্ড, নারায়ণগঞ্জ, নীলফামারী, পটুয়াখালী, সিরাজগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও অনুভূত হয়। এমনকি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা ও আশপাশের এলাকাও কেঁপে ওঠে।
ঢাকায় কম্পন অনুভূত হওয়ার পরপরই আতঙ্ক:
ভূমিকম্প শুরু হতেই রাজধানীর বিভিন্ন বহুতল ভবনের বাসিন্দারা মুহূর্তেই রাস্তায় নেমে আসেন। বিশেষ করে অফিস এলাকায় ও আবাসিক উচ্চ ভবনগুলোতে আতঙ্ক বেশি দেখা গেছে।
ভূমিকম্পের সময়-
1. অনেক বাসিন্দা দ্রুত সিঁড়ি ব্যবহার করে নিচে নামেন,
2. কেউ কেউ নিরাপত্তার জন্য খোলা জায়গায় অবস্থান নেন,
3. অনেকেই মোবাইল নেটওয়ার্কে চাপ বাড়ায় অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন।
কম্পন কতক্ষণ স্থায়ী ছিল?
মাঝারি মাত্রার এই ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। তবে স্বল্প সময়ের এই কম্পনই মানুষের মনে বেশ ভয় তৈরি করে।
উৎপত্তিস্থল: নরসিংদী
USGS তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর খুব কাছাকাছি এলাকায়।
এটি বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থানের কারণে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ-
1. নরসিংদী ও ঢাকার মধ্যবর্তী অঞ্চলগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ জোনে পড়ে,
2. টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া মাঝে মাঝে এ ধরনের মাঝারি মাত্রার কম্পন তৈরি করে,
3. ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহর হওয়ায় মাঝারি কম্পনও বেশি অনুভূত হয়।
কম্পন ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন জেলায়:
বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার ঘটনাটি মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন জেলার মানুষ জানান-
– হালকা দুলুনি টের পেয়েছেন,
– ফ্যান, দরজা ও আসবাবপত্র দুলতে দেখেছেন,
– টানা কয়েক সেকেন্ড কম্পনের কারণে আতঙ্কিত হয়েছেন।
ভারতেও অনুভূত হয় একই কম্পন:
শুধু বাংলাদেশ নয়-পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ আশপাশের এলাকাতেও ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক ভবনের বাসিন্দারা কম্পন টের পেয়েই নিচে নেমে আসেন।
ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর নেই:
ভূমিকম্পের পরপরই দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এখন পর্যন্ত
– কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি,
– ভবন ধস,
– বা হতাহতের ঘটনা
ঘটেনি বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ধরনের মাঝারি মাত্রার কম্পনে ক্ষয়ক্ষতি না হওয়া বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে স্বস্তির বিষয়।
ভবিষ্যতে ভূমিকম্পে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা:
বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হওয়ায় নিয়মিত সতর্কতা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই কয়েকটি বিষয় মনে রাখার পরামর্শ দেন:
1. ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করা,
2. বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের নিয়মিত ড্রিল করা,
3. ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প প্রতিরোধী কাঠামো ব্যবহার করা,
4. ঘর-বাড়ির ভারী কাঠামো সঠিকভাবে স্থাপন করা।
উপসংহার:
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুভূত ৫.৫ মাত্রার এই ভূমিকম্প বড় কোনো ক্ষতি করেনি-এটি স্বস্তির খবর। তবে এই ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল যে বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই সচেতনতা, প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা জরুরি।
FAQ:
১. ঢাকায় আজকের ভূমিকম্প কত মাত্রার ছিল?
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) অনুযায়ী এটি ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৫ মাত্রার।
২. ভূমিকম্প কোথা থেকে উৎপত্তি হয়েছিল?
নরসিংদী জেলার ঘোড়াশাল এলাকার কাছাকাছি, কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে।
৩. কত সেকেন্ড কম্পন অনুভূত হয়েছিল?
কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল মাঝারি কম্পনটি।
৪. কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি?
না, এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
৫. ভারতেও কি কম্পন অনুভূত হয়েছে?
হ্যাঁ, পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ অনেক এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়।
পোস্ট ট্যাগ:
ভূমিকম্প ঢাকা, বাংলাদেশ ভূমিকম্প খবর, নরসিংদী ভূমিকম্প, ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প, ঢাকা কম্পন, আজকের ভূমিকম্প নিউজ, বাংলাদেশ ভূত্বক কম্পন, ঢাকা লাইভ নিউজ, বাংলাদেশ নিউজ ট্রেন্ডিং

