ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) পহেলা অগ্রহায়ণকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে। জানুন ইতিহাস, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ও দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি।
ডাকসু ঘোষণা করল পহেলা অগ্রহায়ণকে নববর্ষ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) পহেলা অগ্রহায়ণকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে বছরের প্রথম দিন উদযাপন এখন বৈশাখের বদলে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঐতিহ্যগতভাবে নববর্ষ উদযাপন বৈশাখে করলেও এবার ডাকসু ইতিহাস পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
চারুকলা অনুষদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্য’র সহায়তায় দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নবান্ন উৎসব আয়োজন করা হবে। শুক্রবার চারুকলা অনুষদে সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠানসূচি প্রকাশ করা হয়েছে। এই বছর অনুষ্ঠানটি রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ১ অগ্রহায়ণ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
কেন অগ্রহায়ণে নববর্ষ উদযাপন?
ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দিক ইবনে আলী মোহাম্মদ এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নববর্ষ উদযাপন বাংলার সাংস্কৃতিক চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এককালে পহেলা অগ্রহায়ণই নববর্ষ হিসেবে উদযাপিত হত।
বাংলা বছরের ১২ মাসের মধ্যে ১১ মাসই নক্ষত্রের নামে। যেমন:
১. বৈশাখ – বিশাখা নক্ষত্র
২. জ্যৈষ্ঠ – জ্যেষ্ঠা নক্ষত্র
৩. আষাঢ় – আষাঢ়ার নক্ষত্র
এভাবে শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্রও নক্ষত্রের সঙ্গে যুক্ত।
অগ্রহায়ণ একমাত্র মাস যা কোনো নক্ষত্রের সঙ্গে যুক্ত নয়। এটি ইতিহাস, স্মৃতি এবং বাংলার বিস্মৃত ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
পহেলা অগ্রহায়ণের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
ঐতিহাসিকভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হতো পহেলা অগ্রহায়ণে। এ সময় উদযাপিত হত ‘আমানি’ বা ‘নবান্ন উৎসব’, যা মূলত কৃষকের উৎসব। সম্রাট আকবরের সময় বৈশাখকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় খাজনা আদায় সুবিধার্থে। কিন্তু সাধারণ মানুষ বৈশাখকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে উদযাপন করত না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে জাঁকজমকের সঙ্গে চালু করেন। ধীরে ধীরে কলকাতার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে উৎসাহ পেতে শুরু করে। ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশে প্রথমবার পহেলা বৈশাখ উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাকিস্তানি শাসনের বিরোধিতার কারণে বাঙালির মধ্যে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ডাকসুর উদ্দেশ্য:
মুসাদ্দিক বলেন, বর্তমান প্রজন্ম প্রায় ভুলতে বসেছে যে এককালে পহেলা অগ্রহায়ণই বাংলার নববর্ষ ছিল। নব প্রজন্মকে ইতিহাস মনে করাতে এবং আদি নবান্ন উৎসবকে পুনরুজ্জীবিত করতে ডাকসু এই উদ্যোগ নিয়েছে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি:
১. সকাল: রঙতুলিতে নবান্ন থিমে ছবি আঁকা
২. এরপর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন
৩. বিকেল ও সন্ধ্যায় ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব ও কৃষক সংস্কৃতি উপস্থাপন
৪. অনুষ্ঠান চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন:
১. মুসাদ্দিক ইবনে আলী মোহাম্মদ (সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক)
২. এবি যুবায়ের (সমাজসেবা সম্পাদক)
৩. আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ (স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক)
৪. মৃন্ময় মিজান (বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্য সভাপতি)
উপসংহার:
ডাকসুর এই উদ্যোগ বর্তমান প্রজন্মকে বাংলার আদি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মনে করিয়ে দেবে। নবান্ন উৎসবের পুনরুজ্জীবন শুধু কৃষিকাজের উৎসব নয়, বরং বাংলার ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করে।
FAQ:
প্রশ্ন ১: পহেলা অগ্রহায়ণ কি?
উত্তর: পহেলা অগ্রহায়ণ হলো অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিন, যা এক সময় বাংলার নববর্ষ হিসেবে উদযাপিত হত।
প্রশ্ন ২: কেন নববর্ষ এখন বৈশাখে উদযাপন করা হয়?
উত্তর: সম্রাট আকবরের সময় প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বৈশাখকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে স্থাপন করা হয়।
প্রশ্ন ৩: নবান্ন উৎসব কি?
উত্তর: নবান্ন হলো কৃষি উৎসব, যা পহেলা অগ্রহায়ণে উদযাপিত হত। এতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খাওয়া-দাওয়া ও কৃষ্টি প্রদর্শন করা হয়।
প্রশ্ন ৪: ডাকসুর পহেলা অগ্রহায়ণ উৎসব কখন হবে?
উত্তর: রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ১ অগ্রহায়ণ।
পোস্ট ট্যাগ:
ডাকসু, পহেলা অগ্রহায়ণ, বাংলা নববর্ষ, নবান্ন উৎসব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী উৎসব, পহেলা বৈশাখ ইতিহাস, অগ্রহায়ণ উৎসব, বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ডিইউ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

