ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুদমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চালু করেছে ‘কর্জে হাসানা প্রকল্প’। শিক্ষার্থীদের জরুরি আর্থিক সহায়তা, পরীক্ষার ফি ও চিকিৎসা খাতে সুদমুক্ত ঋণ প্রদানই এর মূল উদ্দেশ্য। জানতে পড়ুন পূর্ণ সংবাদ ও বিশ্লেষণ।
ইবি শিক্ষার্থীদের মানবিক উদ্যোগ:
কর্জে হাসানা প্রকল্পের সূচনা- সুদমুক্ত সমাজ গঠনের মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একদল শিক্ষার্থী বাস্তবধর্মী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তাদের হাতে গড়া এই উদ্যোগের নাম— কর্জে হাসানা প্রকল্প। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক সুদমুক্ত আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রকল্পটি উদ্বোধন হয় শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলসংলগ্ন মসজিদ চত্বরে। বাংলাদেশ ইউথ এনভায়রনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সায়েদ মুনতাসীর এই উদ্যোগের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
কর্জে হাসানা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য:
প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হলো- সুদবিহীন আর্থিক সহায়তা প্রদান। বিশেষত যারা হঠাৎ সমস্যায় পড়ে পরীক্ষার ফি দিতে পারেন না, চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে বা স্বল্পমেয়াদি আর্থিক চাপের মধ্যে থাকেন-তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোই এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য।
এখানে যেসব ক্ষেত্রে সহায়তা পাওয়া যাবে:
a. বিভাগীয় পরীক্ষার ফি প্রদান
b. শিক্ষার্থীদের জরুরি চিকিৎসা সহায়তা
c. আকস্মিক আর্থিক দুরবস্থায় স্বল্পমেয়াদি ঋণ
এই প্রকল্পের কোনো অর্থেই সুদ যোগ হবে না-এটাই এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
প্রকল্পের পেছনের প্রেরণা:
আখুওয়াত ফাউন্ডেশনের মডেল প্রকল্প পরিচালক সায়েম হোসেন জানান, ‘কর্জে হাসানা’ ধারণাটি নেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের সুপরিচিত ওয়েলফেয়ার সংগঠন আখুওয়াত ফাউন্ডেশন থেকে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে।
সায়েমের মতে, ক্যাপিটালিজম ও সোশ্যালিজমের তুলনামূলক অধ্যয়ন করতে গিয়ে তিনি সহমর্মিতাভিত্তিক অর্থনীতির ধারণা সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পারেন। সেই জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগই হলো এই প্রকল্পের সূচনা।
এছাড়াও, বড় ভাইসম শিক্ষক সাঈদ মুনতাসীরের আর্থিক সহায়তা ও লাইট অব কোরআনের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প যাত্রা শুরু করেছে।
ইসলামের অর্থনৈতিক নীতির অনুসরণ:
কর্জে হাসানা প্রকল্পের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষাকে অনুসরণ করে সুদমুক্ত একটি মানবিক অর্থনীতি গড়ে তোলা।
সায়েম হোসেন বলেন,
a. পুঁজিবাদী অর্থনীতির ঋণ প্রকল্পে সুদ শিক্ষার্থীদের আর্থিক চাপ বাড়ায়
b. মানবিক ইসলামি অর্থনীতি সমাজে ভারসাম্য আনে
c. শিক্ষার্থীরা যেন কোনো এনজিওর কাছে ঋণ নিতে বাধ্য না হয়-এটাই প্রকল্পের লক্ষ্য
এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, শিক্ষা ও মানবিকতা মিলিয়ে একটি ইসলামী অর্থনৈতিক মডেল নির্মাণের গভীর আকাঙ্ক্ষা রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা:
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আশরাফ উদ্দিন খান আজহারী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন-
a. প্রকল্প পরিচালক সায়েম হোসেন
b. সহপরিচালক মানিক রহমান
c. বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা
তাদের উপস্থিতি ও উৎসাহ প্রকল্পকে নতুন দিক নির্দেশনা দিয়েছে।
উপসংহার:
ইবি শিক্ষার্থীদের কর্জে হাসানা প্রকল্প শুধু একটি অর্থনৈতিক উদ্যোগ নয়—এটি মানবিকতার এক বাস্তব রূপ। সুদের ভয়াবহতা থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করে, সহমর্মিতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি সমাজ গড়ার স্বপ্ন ধারণ করেই এই প্রকল্পের সূচনা। ভবিষ্যতে যদি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে, তবে শিক্ষার্থী সমাজে আর্থিক ন্যায্যতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা আরও শক্তিশালী হবে।
FAQ:
১. কর্জে হাসানা প্রকল্প কারা গ্রহণ করতে পারবে?
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী জরুরি আর্থিক প্রয়োজন হলে আবেদন করতে পারবে।
২. এই ঋণে কি কোনো সুদ দিতে হবে?
না, এটি সম্পূর্ণ সুদমুক্ত।
৩. কী ধরনের পরিস্থিতিতে এই সহায়তা পাওয়া যাবে?
a. পরীক্ষার ফি
b. চিকিৎসা সহায়তা
c. জরুরি আর্থিক সমস্যা
৪. উদ্যোগটি কারা পরিচালনা করছে?
ইবি শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে প্রকল্প পরিচালনা করছে, এবং সায়েদ মুনতাসীরের সহযোগিতা রয়েছে।
৫. কোনো এনজিওর সাথে কি প্রকল্পটির সম্পর্ক আছে?
না, এটি শিক্ষার্থী-উদ্যোগে পরিচালিত স্বাধীন প্রকল্প।
পোস্ট ট্যাগ:
কর্জে হাসানা প্রকল্প, সুদমুক্ত ঋণ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইবি শিক্ষার্থী উদ্যোগ, সুদমুক্ত সমাজ, ইসলামি অর্থনীতি, আখুওয়াত ফাউন্ডেশন, সুদমুক্ত সহায়তা, ছাত্র কল্যাণ, মানবিক অর্থনীতি
