সন্তান জন্মের পর আমাদের দেশের বেশীরভাগ দম্পতির সম্পর্কেই ভাটা পড়ে। দুই বা তিন সন্তান হলে তো কথাই নেই। বাচ্চার পিছনে দৌড়ে দৌড়ে, সংসারের কাজ করে স্বামীর সাথে রোমান্টিক সম্পর্কের মুড থাকে না। এতে সম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়।
১. বাচ্চার সাথে আলাদা ঘুমানোর গুরুত্ব: দেশীয় সংস্কৃতিতে বাচ্চাকে অনেক সময় মা-বাবার সাথে ঘুমানোর অভ্যাস দেখা যায়, যদিও বাচ্চার বয়স ৫-৭ বছর হলেও তারা মা-বাবার সাথে ঘুমায়। তবে বাচ্চার বয়স যখন আড়াই থেকে তিন বছর হয়, তখন তাদের আলাদা ঘুমানো শুরু করা উচিত। কারণ তখন তারা অনেক কিছু বুঝতে পারে। রাতে বাচ্চার সাথে ঘুমালে মা-বাবার ঘুম ভেঙে যায়, অপ্রস্তুত অবস্থায় তারা একে অপরকে দেখে প্রশ্ন জাগতে পারে, যা দাম্পত্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
২. বাচ্চাকে আলাদা ঘরে রাখা প্রয়োজন: বাচ্চার বয়স যখন আড়াই থেকে তিন বছর হয়, তখন তাকে আলাদা ঘরে রাখা উচিত। এতে বাচ্চা কষ্ট পাবে না, বরং এটি তার জন্য এবং দম্পতির সম্পর্কের জন্য উপকারী। বাচ্চা দূরে সরে যাবে এমন ধারণা ভুল, বরং এটি সম্পর্কের সুস্থতা বজায় রাখে।
৩. বাচ্চার জন্য আলাদা বিছানা ও ঘর সাজানো: বাচ্চার জন্য আলাদা বিছানা তৈরি করুন এবং তার রুমটি তার পছন্দ অনুযায়ী সাজিয়ে দিন। রাতে গল্প শুনিয়ে বা বই পড়িয়ে তাকে ঘুম পাড়ান। ঘুমানোর পর নিজে আপনার রুমে ফিরে আসুন। বাচ্চা আপনার অনুপস্থিতি টের পাবে না। রাতে বাচ্চা উঠলে বেবি মনিটর ব্যবহার করতে পারেন, যা আপনাকে তার আওয়াজ শুনতে সাহায্য করবে। সকালে বাচ্চার পাশে গিয়ে আবার ঘুমাতে দিন। এই ডিভাইসটি Daraz এ পাওয়া যায়। পাঠকের সুবিধার জন্য প্রোডাক্ট এর লিংকটি দিয়ে দিচ্ছি।
৪. বড় সন্তানের প্রতি বিশেষ যত্ন: যখন দ্বিতীয় সন্তান আসে, অনেক মা প্রথম সন্তানের প্রতি অবহেলা করতে পারেন। এতে বড় সন্তানের মনে ছোট সন্তানের প্রতি বিদ্বেষ জন্মায়। তাই এই সময়ে বড় সন্তানের প্রতি বেশি সময় ও ভালোবাসা দেয়া প্রয়োজন। তাকে বোঝাতে হবে যে তার প্রতি মায়ের ভালোবাসা কমেনি। এটি স্বামী-স্ত্রীর যৌথ দায়িত্ব।
৫. সন্তানদের মধ্যে তুলনা করবেন না: দুই সন্তানের মধ্যে তুলনা করা উচিত নয়। তারা আলাদা মানুষ এবং আলাদা নিয়ম থাকা উচিত নয়। দুই সন্তানের জন্য একই নিয়মাবলী প্রযোজ্য হওয়া উচিত। বাচ্চাদের বেডটাইম একই রাখুন এবং একই ধরনের জিনিস কিনুন। ছোট সন্তানের বয়স যখন আড়াই বছর হবে, তখন তাকে আলাদা ঘরে রাখুন, বড় সন্তানের সাথে একই ঘরে কিন্তু আলাদা বিছানায়।
৬. পরিবারের জন্য একসাথে সময় রাখা: দিনে অন্তত এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরিবারের সবাই মিলে সময় কাটান। হাসি-আনন্দ করুন, বাচ্চাদের সাথে খেলুন এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক বজায় রাখুন। মেজাজ খারাপ থাকলে অকারণে ঝগড়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে আলাদা ঘরে গিয়ে মেডিটেশন করুন, নিজের মেজাজ বিশ্লেষণ করুন এবং শান্ত থাকুন।
সংসার গড়ে ওঠে স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানের মিলনে। সংসারের কাজ করতে করতে এই মানুষগুলো যেন অবহেলিত না হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের। ভালোবাসার সম্পর্কগুলো অটুট থাকুক, সুখী ও সুস্থ পরিবার গড়ে উঠুক।
পোস্ট ট্যাগ:
সন্তান জন্মের পর স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক , দাম্পত্য সম্পর্কের সমস্যা , বাচ্চার সাথে আলাদা ঘুমানোর গুরুত্ব , পরিবারে ভালোবাসা বজায় রাখা , সন্তানদের জন্য আলাদা ঘর , বড় সন্তান ও ছোট সন্তানের সম্পর্ক , সন্তানদের মধ্যে তুলনা না করা , দাম্পত্যে তিক্ততা কমানোর উপায় , বাচ্চার জন্য বেবি মনিটর ব্যবহার , স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক সম্পর্ক রক্ষা , পরিবারে সময় কাটানোর গুরুত্ব , মা বাবার সম্পর্ক ও সন্তান পালন , সন্তান জন্মের পর সম্পর্কের পরিবর্তন , দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার টিপস , সন্তান ও দাম্পত্য সম্পর্ক সমন্বয়