জাদু টোনা আক্রান্তের কারণে অনেকেই অনেক কষ্ট সহ্য করে থাকেন। আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। জাদুবিদ্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে:
১. প্রথমে, আপনাকে জানতে হবে জাদুকর কীভাবে জাদুটি করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি জানা যায় যে জাদুকর কিছু চুল একটি নির্দিষ্ট জায়গায়, চিরুনিতে বা অন্য কোনও জায়গায় রেখেছিলেন। যদি স্থানটি জানা থাকে, তাহলে বস্তুটি পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে যাতে জাদু আর কার্যকর না হয় এবং যাদুকর যা করতে চেয়েছিল তা বাতিল হয়ে যায়।
২. যদি জাদুকরকে শনাক্ত করা হয়, তাহলে তাকে তার তৈরি জাদু ধ্বংস করতে বাধ্য করা হবে। তাকে বলা হবে: তুমি যা জাদু করেছ তা ধ্বংস করো, নইলে তোমার ঘাড় কেটে ফেলা হবে। জাদুকরী যন্ত্রটি ধ্বংস করার পর, মুসলিম শাসক তাকে হত্যার নির্দেশ দেবেন। কারণ বিশুদ্ধ বিশ্বাস অনুসারে, যাদুকরকে তওবার আহ্বান না করেই হত্যা করা হবে। যেমনটি উমর (রাঃ) করেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন: “যাদুকরের শাস্তি হলো তরবারি দিয়ে তার ঘাড় কেটে ফেলা।” যখন হাফসা (রাঃ) জানতে পারলেন যে তার এক দাসী যাদু করছে, তখন তাকে হত্যা করা হল।
৩. জাদু ধ্বংসে ঝাড়ু ফুঁ দেওয়ার দারুণ প্রভাব রয়েছে: পদ্ধতি হলো আয়াতুল কুরসি অথবা সূরা আ'রাফ, সূরা ইউনুস এবং সূরা ত্বাহার যাদু সম্পর্কিত আয়াতগুলো যাদুতে আক্রান্ত রোগীর উপর অথবা পাত্রে পাঠ করা।
এর সাথে সূরা কাফিরুন, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করুন এবং রোগীর জন্য দোয়া করুন, বিশেষ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দোয়া:
“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।”
(অর্থ- হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রতিপালক! আপনি কষ্ট দূর করে দিন ও আরোগ্য দান করুন। (যেহেতু) আপনিই রোগ আরোগ্যকারী। আপনার আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। আপনি এমনভাবে রোগ নিরাময় করে দিন যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।)
জিব্রাইল (আঃ) যে দুআ পাঠ করেছিলেন এবং নবী (সাঃ)-এর উপর ফুঁ দিয়েছিলেন, তাও পাঠ করা যেতে পারে। সে দুআটি হচ্ছে- “বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।”
(অর্থ- আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি।)
এই দোয়াটি তিনবার পাঠ করুন এবং তাকে ফুঁ দিন। সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস তিনবার পাঠ করুন এবং তাকে ফুঁ দিন। আমরা যে দোয়াগুলি উল্লেখ করেছি তা পাঠ করে পানিতে ফুঁ দিন। তারপর যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি পানি পান করবেন। আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী একবার বা একাধিকবার গোসল করুন। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন। আলেমগণ এই আমলগুলো উল্লেখ করেছেন।শায়খ আব্দুর রহমান বিন হাসান (রহঃ) তাঁর 'ফাতহুল মাজিদ শারহু কিতাবিত তাওহীদ' গ্রন্থের 'নাশরা' অধ্যায়ে এই এবং অন্যান্য বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন।
৪. তাকে সাতটি কাঁচা বরই পাতা সংগ্রহ করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। তারপর, গুঁড়োটি পানির সাথে মিশিয়ে পানিতে উল্লেখিত আয়াত এবং দোয়াগুলো পাঠ করে তাতে ফুঁ দিতে হবে।
তারপর, সে পানি পান করবে এবং অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করবে। এই অভ্যাসটি সেইসব ক্ষেত্রেও উপকারী, যদি কোনও পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে অক্ষম হন। তার উচিত সাতটি বরই পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখা।
তারপর উল্লেখিত আয়াত এবং দোয়া পাঠ করে পানিতে ফুঁ দেওয়া। তারপর তার পানি পান করা উচিত এবং এর কিছু অংশ দিয়ে গোসল করা উচিত।
যাদুগ্রস্ত এবং যার স্ত্রী সহবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে, তার চিকিৎসার জন্য বরই পাতার জলে যে আয়াত এবং দুআগুলি পাঠ করা উচিত তা নিম্নরূপ:
১. সূরাতুল ফাতিহা।
২. সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত (আয়াতুল কুরসি) পড়া।
اَللّٰهُ لَآ اِلٰهَ اِلَّا ھُوَۚ اَلْـحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَاْخُذُهٗ سِـنَةٌ وَّلَا نَوْمٌۭ لَهٗ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْاَرْضِۭ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗٓ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ۭ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَھُمْ ۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖٓ اِلَّا بِمَا شَاۗءَۚ وَسِعَ كُرْسِـيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ ۚ وَلَا يَـــــُٔـــوْدُهٗ حِفْظُهُمَاۚ وَھُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ
(আয়াতটির অর্থ হচ্ছে-“আল্লাহ্; তিনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা কিছু রয়েছে ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে সে সবকিছু তিনি জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না। তাঁর ‘কুরসী’ আকাশসমূহ ও পৃথিবীকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। তিনি সুউচ্চ সুমহান।)
৩. সূরা আরাফের নিম্নলিখিত যাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। আয়াতগুলো হচ্ছে-
قَالَ إِنْ كُنْتَ جِئْتَ بِآيَةٍ فَأْتِ بِهَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ (106) فَأَلْقَى عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُبِينٌ (107) وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ (108) قَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ (109) يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ (110) قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ (111) يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (112) وَجَاءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوا إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ (113) قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ (114) قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ (115) قَالَ أَلْقُوا فَلَمَّا أَلْقَوْا سَحَرُوا أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءُوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ (116) وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (118) فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (120)قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ (122)
(অর্থ- সে বলল, তুমি যদি কোন নিদর্শন নিয়ে এসে থাক, তাহলে তা পেশ কর যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক। তখন তিনি নিজের লাঠিখানা নিক্ষেপ করলেন এবং তৎক্ষণাৎ তা জলজ্যান্ত এক অজগরে রূপান্তরিত হয়ে গেল। আর বের করলেন নিজের হাত এবং তা সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের চোখে ধবধবে উজ্জ্বল দেখাতে লাগল। ফেরাউনের সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলতে লাগল, নিশ্চয় লোকটি বিজ্ঞ-যাদুকর। সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এ ব্যাপারে তোমাদের মতামত কি? তারা বলল, আপনি তাকে ও তার ভাইকে অবকাশ দান করুন এবং শহরে বন্দরে সংগ্রাহক পাঠিয়ে দিন। যাতে তারা পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন বিজ্ঞ যাদুকরদের এনে সমবেত করে। বস্তুতঃ যাদুকররা এসে ফেরাউনের কাছে উপস্থিত হল। তারা বলল, আমাদের জন্যে কি কোন পারিশ্রমিক নির্ধারিত আছে, যদি আমরা জয়লাভ করি? সে বলল, হ্যাঁ এবং অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোক হয়ে যাবে। তারা বলল, হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা আমরা নিক্ষেপ করছি। তিনি বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা বান নিক্ষেপ করল তখন লোকদের চোখগুলো যাদুগ্রস্ত হয়ে গেল, মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল এবং মহাযাদু প্রদর্শন করল। তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা যাদুর বলে বানিয়েছিল। এভাবে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং ভুল প্রতিপন্ন হয়ে গেল যা কিছু তারা করেছিল। সুতরাং তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব লাঞ্ছিত হল। এবং যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। বলল, আমরা ঈমান আনছি মহা বিশ্বের প্রতিপালকের প্রতি। যিনি মূসা ও হারুনের প্রতিপালক।) [সূরা আরাফ, আয়াত: ১০৬-১২২]
৪. সূরা ইউনুসের নিম্নলিখিত যাদুবিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। আয়াতগুলো হচ্ছে-
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (79) فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَى أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ (80) فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَى مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ
(অর্থ- আর ফেরাউন বলল, আমার কাছে নিয়ে এস সুদক্ষ যাদুকরদিগকে। তারপর যখন যাদুকররা এল, মূসা তাদেরকে বললেন:নিক্ষেপ কর, তোমরা যা কিছু নিক্ষেপ করে থাক। অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, মূসা বললেন, যা কিছু তোমরা এনেছ তা সবই যাদু-এবার আল্লাহ এসব ভণ্ডুল করে দিচ্ছেন।
নিঃসন্দেহে আল্লাহ দুস্কর্মীদের কর্মকে সুষ্ঠুতা দান করেন না। আল্লাহ সত্যকে সত্যে পরিণত করেন স্বীয় নির্দেশে যদিও পাপীদের তা মনঃপুত নয়।)[সূরা ইউনুস, আয়াত: ৭৯-৮২]
৫. সূরা ত্বহা এর নিম্নলিখিত আয়াতগুলো পড়া -
قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَى (65) قَالَ بَلْ أَلْقُوا فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَى (66) فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَى (67) قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَى (68) وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى (69)
(অর্থ-তারা বললঃ হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ কর, না হয় আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বললেনঃ বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের যাদুর প্রভাবে হঠাৎ তাঁর মনে হল, যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। অতঃপর মূসা মনে মনে কিছুটা ভীতি অনুভব করলেন। আমি বললামঃ ভয় করোনা, তুমি বিজয়ী হবে। তোমার ডান হাতে যা আছে তুমি তা নিক্ষেপ কর। এটা তারা করেছে যা কিছু সেগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে তাতো কেবল যাদুকরের কলাকৌশল। যাদুকর যেখানেই থাকুক, সফল হবেনা।) [সূরা ত্বহা, আয়াত: ৬৫-৬৯]
৬. সূরা কাফিরুন পাঠ করুন।
৭. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস ৩ বার করে পাঠ করুন।
৮. নিম্নলিখিত কিছু দোয়া দরুদ পড়া -
“আল্লাহুম্মা, রাব্বান নাস! আযহিবিল বা’স। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা য়ুগাদিরু সাকামা।” [৩ বার]
এর সাথে এই দোয়াটি পাঠ করা ভালো হবে “বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন য়ুযিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।”[৩ বার] যদি উপরোক্ত আয়াত এবং দোয়াগুলি পড়ে সরাসরি যাদু দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির উপর ফুঁ দেওয়া হয় তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় সে আরোগ্য লাভ করবে।
উপরোক্ত আমলগুলোর সাথে কোরবানির ঈদের সময় নিম্নোক্ত আমল গুলিও যোগ করতে পারেন।
কুরবানীর মওসুম আসলে এমন একটি সময় যখন অনেকের ক্ষেত্রেই কিছু শারীরিক, মানসিক বা আধ্যাত্মিক সমস্যা পুনরুত্থিত হয় অথবা পুরনো সমস্যাগুলি অস্বাভাবিকভাবে তীব্র হয়ে ওঠে।
আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি যে এর পেছনে একটি বিশেষ কারণ হল, শয়তানী উপায়ে সম্পাদিত জাদুর নেতিবাচক প্রভাব, যা প্রায়শই কুরবানীর সময় বা শয়তানের নামে কুরবানী ও নৈবেদ্যের মাধ্যমে সম্পর্কিত, সক্রিয় হয়ে ওঠে।
যারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন এবং মনে করেন যে কোনও জিন-যাদু এবং শয়তানী শক্তির প্রভাবে তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে, আশা করি এই অর্টিকেলটি তাদের উপকারে আসবে। পূর্ণ বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সাথে এই কাজগুলি সম্পাদন করলে, আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য ও সুরক্ষা অর্জন করা সম্ভব হবে। পরীক্ষিত এবং শরিয়া-ভিত্তিক অনুশীলনের বিস্তারিত নীচে দেওয়া হল।
১. প্রথম আমল: কুরবানী সম্পর্কিত আয়াতটি পড়ুন:
قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ ۙ
উচ্চারণ: ক্বুল ইন্না সালা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন।
অর্থ: বলুন, নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু—সবকিছুই আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। (সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৬২)
আমলের নিয়ত: নিয়ত করুন যে, এই আয়াতটি পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহ কুরবানীর সময় এবং পশু কোরবানির সাথে সম্পর্কিত সকল ধরণের জাদুকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস ও বাতিল করে দেবেন, যা শয়তানের নামে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অথবা এই সময়ে নতুন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।
আমলের নিয়ম বা পদ্ধতি-
সহীহ তিলাওয়াত ও তেল, পানি প্রস্তুত করন: উপরের আয়াতটি গভীর মনোযোগ সহকারে এবং এর অর্থ বুঝতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ধরে তেলাওয়াত করুন। যদি আপনি নিজে এটি করতে না পারেন, তাহলে কাউকে আপনার ডান কানের কাছে জোরে তেলাওয়াত করতে বলুন। তেলাওয়াতের পর পানি এবং বিশুদ্ধ অলিভ অয়েল (Olive Oil) এর উপর ফুঁ দিন।
যেভাবে (Olive Oil) তেলটি ব্যবহার করবেন:
এই আয়াত পাঠ করা তেলটি আলতো করে ম্যাসাজ করুন, প্রয়োজনে চাপ দিয়ে শরীরের যে কোনও অংশে যেখানে আপনি ব্যথা, অস্বস্তি, জ্বালাপোড়া বা অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করছেন (ইনশাআল্লাহ, এতে আরাম পাবেন)।
উক্ত আয়াত পাঠকৃত পানির ব্যবহার: আরোগ্য লাভের জন্য বিশ্বাসের সাথে বারবার এই পানি পান করুন। সম্ভব হলে, যে পানিতে আয়াতটি পাঠ করা হয়েছে সেই জল দিয়ে গোসল করুন।
সম্ভব হলে, গোসলের পানিতে বরই পাতা মিশিয়ে নিন (যদি বরই পাতা না থাকে, তাহলে সেগুলো ছাড়া গোসল করুন)।
গোসলের সময় এই নিয়ত করুন:
হে আল্লাহ, তোমার এই পবিত্র আয়াতে পাঠ করা জলের মাধ্যমে আমার শরীর থেকে শয়তানের নামে কুরবানী ও কুরবানীর সময় সম্পর্কিত সমস্ত জাদু এবং জ্বিন-শয়তানের প্রভাব সম্পূর্ণরূপে ধুয়ে যাক এবং গোসলের পানি দিয়ে এটি বেরিয়ে আসতে দিন। এভাবে নিয়ত করার পর, আপনি গোসল সম্পন্ন করবেন।
২. দ্বিতীয় আমল- কুরবানি প্রত্যক্ষ করা: ঈদের দিন, যখন আপনার কোরবানির পশু শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবাই করা হয়, সম্ভব হলে নিজের চোখে পুরো প্রক্রিয়াটি দেখার চেষ্টা করুন। এটি আল্লাহর নামে কুরবানীর প্রতি আপনার ভক্তি এবং একত্ববাদের সাক্ষ্য দেবে, যেখানে শয়তানের নামে পশু কোরবানি করা যাদুবিদ্যার বিপরীতে।
কুরবানির মাংস গ্রহণ: অবশ্যই, বরকত অর্জনের নিয়তে কুরবানীর মাংস খাও।
সতর্কতা ও পরবর্তী করণীয়: উপরের দ্বিতীয় কাজটি করার পর (যেমন, কোরবানির পশু জবাই দেখা বা তার মাংস খাওয়া) যদি আপনার শরীর বা মনে কোনও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় (যেমন, পুরানো সমস্যার অবনতি, নতুন অস্বস্তির সূত্রপাত, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি), তাহলে মোটেও আতঙ্কিত হবেন না।
এই পরিস্থিতিতে, অবিলম্বে প্রথম কাজটি (আয়াতগুলি পাঠ করা, তেল লাগানো এবং জল পান করা) বারবার এবং প্রচুর পরিমাণে চালিয়ে যান।
জাদুর প্রভাবের ফলে সৃষ্ট এই প্রতিক্রিয়াগুলি সম্পূর্ণরূপে উপশম এবং নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে এই অনুশীলনটি চালিয়ে যান। এই সময়ে, আয়াতগুলি পাঠ করে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ আরোগ্য দান করবেন।
প্রত্যাশিত ফলাফল (বি-ইযনিল্লাহ): যদি এই কাজগুলো আন্তরিকতা (ইখলাস), সঠিক নিয়ত এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা সহকারে করা হয়, তাহলে আশা করা যায় যে-
কোরবানির সময় বিশেষভাবে করা যেকোনো জাদু, যা তোমার সাথে সম্পর্কিত, আল্লাহর আদেশে দুর্বল এবং ধ্বংস হয়ে যাবে।
বিশেষ করে, শয়তানের নামে পশু বলিদান বা উৎসর্গ করার মাধ্যমে যে জাদু সক্রিয় হয়েছিল তা তার কার্যকারিতা হারাবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের সকলকে সকল ধরণের জাদু, যাদু, বদ নজর এবং সকল শয়তানী চক্রান্ত থেকে রক্ষা করুন। তিনি আমাদের ত্যাগ এবং সকল সৎকর্ম কবুল করুন। আমিন, হে জগৎসমূহের প্রতিপালক।
জনস্বার্থে এই বার্তাটি শেয়ার করুন এবং অন্যদেরও উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দিন।
পোস্ট ট্যাগ:
কুরবানি আমল, যাদুর চিকিৎসা, ইসলামিক রুকইয়াহ , কুরআন শিফা, আত্মশুদ্ধি , সুরক্ষা , আল্লাহর কাছে আশ্রয়, কুরানিক চিকিৎসা