এমআইটির বিজ্ঞানীরা রামান স্পেকট্রোস্কোপি-ভিত্তিক একটি নন-ইনভেসিভ ডিভাইস তৈরি করেছেন যা আঙুলে সুচ ছাড়াই, ত্বকের ওপর আলো ফেলেই রক্তের গ্লুকোজ মাপতে পারে। এটি দ্রুত, কম কষ্টদায়ক এবং ডায়াবেটিস রোগীদের দৈনন্দিন পর্যবেক্ষণে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
প্রচলিত পদ্ধতিতে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের শর্করা (গ্লুকোজ) মাপার জন্য আঙুলে সুচ ঢুকানো এবং এক ফোঁটা রক্ত সংগ্রহ করা হয়। এটি দিনে একাধিকবার করতে হয়, যা অসুবিধাজনক ও কষ্টদায়ক। এই অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে এমআইটি (Massachusetts Institute of Technology)-এর গবেষকরা একটি নন-ইনভেসিভ প্রযুক্তির ওপর কাজ করেছেন, যা রক্তে সুচ ঢুকানো ছাড়াই রক্তের শর্করার মাত্রা নির্ণয় করতে সক্ষম।
এই প্রযুক্তির মূল ভিত্তি রামান স্পেকট্রোস্কোপি। এই পদ্ধতিতে ত্বকের ওপর কাছাকাছি-ইনফ্রারেড বা দৃশ্যমান আলো ফেলে বিভিন্ন আণুর আলো বিচ্ছুরণ (scattering) বিশ্লেষণ করা হয়। প্রতিটি অণু আলোর সঙ্গে আলাদা ধরণে বিরত পরিবর্তন করে, এবং এই “আলোকনিকাশ” থেকে গ্লুকোজের উপস্থিতি ও মাত্রা নির্ণয় সম্ভব হয়।
এই নতুন পদ্ধতিতে যন্ত্রটি একটি ছোট আলো উৎস এবং ডিটেক্টর ব্যবহার করে, যা প্রায় জুতার বাক্স আকারের। ব্যবহারকারী শুধুমাত্র হাত বা বাহু ডিভাইসের ওপর রাখলে, প্রায় ৩০-৪০ সেকেন্ডের মধ্যে রক্ত শর্করার মান জানা যায়। এটি বর্তমানে প্রটোটাইপ স্তরে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও ছোট বা পরিধেয় (wearable) ফর্মে উন্নত করা হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই আলো-ভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে গ্লুকোজ পরিমাপের ফলাফল প্রচলিত ডিভাইসের (যেমন: CGM বা কন্টিনিউয়াস গ্লুকোজ মনিটরিং সিস্টেম) সাথে প্রায় সমান সঠিকতা প্রদর্শন করেছে।
আলো-ভিত্তিক রামান প্রযুক্তি কেন কার্যকর?
রামান স্পেকট্রোস্কোপি এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে মোলিকিউলগুলো আলোর সাথে কীভাবে যোগাযোগ করে তা দেখা হয়। গ্লুকোজ সহ অন্যান্য মোলিকিউল আলোর তরঙ্গকে আলাদা ভাবে বিচ্ছুরিত করে, যার মাধ্যমে গবেষকরা নির্দিষ্ট “ফিঙ্গারপ্রিন্ট” শনাক্ত করতে পারে। এই ফিঙ্গারপ্রিন্টের ভিত্তিতে গ্লুকোজের উপস্থিতি ও তার মাত্রা নির্ণয় করা যায় - তা ব্যথাহীনভাবে।
এটির প্রধান সুবিধাগুলো হলো:
ক. সুচ ছাড়াই পরীক্ষণ — আঙুলে কোনো ছিদ্র করা লাগবে না।
খ. দ্রুত ফলাফল — কয়েক মিনিটের মতো সময়েই রক্তের শর্করা জানা যায়।
গ. কম কষ্টকর — রোগীর জন্য দৈনন্দিন ব্যবহারে সহজ।
ঘ. সঠিক তথ্য — প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় প্রশস্ত গবেষণা পর্যবেক্ষণে সঠিক ফল প্রদান।
এগিয়ে কী?
গবেষকরা এই প্রযুক্তিকে আরও ছোট ও পরিধেয় ডিভাইস (যেমন: ঘড়ির মতো বা স্ট্র্যাপ-ধারী সেন্সর) বানানোর উপর কাজ করছে। মার্চে যে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে তাতে এই প্রযুক্তির ভবিষ্যত সম্ভাবনা এবং কম খরচে উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও রয়েছে।
উপসংহার:
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য প্রতিদিন আঙুলে সুচ ঢুকিয়ে রক্ত শর্করা মাপার কষ্ট ছাড়াই তাদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের একটি নতুন যুগ শুরু হতে যাচ্ছে। এমআইটির আলো-ভিত্তিক রামান স্পেকট্রোস্কোপি প্রযুক্তির পদ্ধতি রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপে রক্তের নমুনা ছাড়াই আদর্শভাবে কাজ করতে প্রমাণিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এটি প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য আরও সুবিধাজনক, কম খরচে, ও ব্যথা-বিহীন স্বাস্থ্য মনিটরিং প্রযুক্তির দিশা উন্মোচন করতে পারে।
FAQ:
প্রশ্ন: এই নতুন যন্ত্রটি কবে বাজারে আসবে?
উত্তর: বর্তমানে এটি গবেষণা ও টেস্টিং পর্যায়ে রয়েছে। ব্যাপক clinical ট্রায়ালের পরে বাজারজাতকরণ হবে।
প্রশ্ন: এটা কি একদম নিখুঁত ফল দেয়?
উত্তর: গবেষণায় দেখা গেছে প্রচলিত ডিভাইসের মতো ফলাফল দেয়, কিন্তু আরও বড় গবেষণায় মূল্যায়ন প্রয়োজন।
প্রশ্ন: সকল বর্ণের মানুষের ত্বকে কি এটা সমানভাবে কাজ করবে?
উত্তর: গবেষকরা প্রযুক্তি বিভিন্ন ত্বক টোনে সক্ষমভাবে কাজ করার জন্য উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
পোস্ট ট্যাগ:
ডায়াবেটিস, রক্ত শর্করা পরীক্ষা, নন-ইনভেসিভ গ্লুকোজ মনিটরিং, রামান স্পেকট্রোস্কোপি, needle-free glucose sensor, MIT গবেষণা, near-infrared light glucose measurement, painless glucose test, diabetes care technology, continuous health monitoring, light-based biosensor, পরিধেয় স্বাস্থ্য প্রযুক্তি, Analytical Chemistry publication.
