বলিউড অভিনেতা ইমরান হাশমি ও ইয়ামি গৌতম অভিনীত নতুন সিনেমা ‘হক’ ৭ নভেম্বর ২০২৫-এ মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ১৯৮৫ সালের শাহ বানো মামলার অনুপ্রেরণায় নির্মিত এই ছবিতে দেখা যাবে ধর্মীয় আইন ও নারীর ন্যায়ের সংঘাতের গল্প।
বলিউড তারকা ইমরান হাশমি আবার ফিরছেন আলোচনায় এক ব্যতিক্রমধর্মী গল্প নিয়ে। তাঁর নতুন সিনেমা ‘হক (Haq)’ তৈরি হয়েছে এক বাস্তব ঘটনার অনুপ্রেরণায় - ভারতের ইতিহাসে আলোচিত শাহ বানো মামলা থেকে।
১৯৮৫ সালের সেই ঘটনা এক নারীর ন্যায়ের লড়াই, ধর্মীয় আইন ও সংবিধানের টানাপোড়েন এবং সামাজিক সমতার প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছিল। সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই এবার বড় পর্দায় ফিরে আসছে শাহ বানোর গল্প, নতুন রূপে, নতুন ভাষায়।
বাস্তব ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত ‘হক’
ছবিতে ইমরান হাশমি অভিনয় করেছেন মোহাম্মদ আহমেদ খান চরিত্রে, আর তাঁর বিপরীতে ইয়ামি গৌতম দেখা দেবেন শাহ বানো বেগম চরিত্রে। কাহিনির মূল আবহ গড়ে উঠেছে এক মুসলিম নারীর আদালত-সংঘাত, নিজের মর্যাদা ও ভরণপোষণের জন্য লড়াইকে কেন্দ্র করে।
ইমরান বলেন,
“নতুন প্রজন্ম হয়তো শাহ বানো মামলাটি সম্পর্কে জানে না। এই সিনেমা সেই ঘটনার অনুপ্রেরণায় তৈরি, যেখানে এক নারী নিজের মর্যাদা ও ন্যায়ের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। শাহ বানো বলেছিলেন, ‘আমি মুসলমান, তবে আমি একজন ভারতীয় নারীও।’”
শাহ বানোর ঐতিহাসিক লড়াই:
১৯৭৮ সালে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের ৬২ বছর বয়সী শাহ বানো বেগম তাঁর স্বামী মোহাম্মদ আহমেদ খানের বিরুদ্ধে ভরণপোষণের মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ সাত বছরের লড়াই শেষে ১৯৮৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শাহ বানোর পক্ষে রায় দেন, যা ছিল নারীর আর্থিক অধিকার প্রতিষ্ঠার এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
তবে রাজনৈতিক চাপ ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতার কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সরকার পরবর্তীতে মুসলিম উইমেন (প্রটেকশন অফ রাইটস অন ডিভোর্স) অ্যাক্ট ১৯৮৬ পাস করে, যা কার্যত সেই রায়কে বাতিল করে দেয়।
এই ঘটনাই ভারতের আইন ও ধর্মীয় ন্যায়ের সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় - যা এখনো প্রাসঙ্গিক।
ইমরানের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যক্তিগত বার্তা:
সম্প্রতি এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান হাশমি বলেন,
“আমি একজন উদার মুসলিম। আমার স্ত্রী পারভিন হিন্দু, আমাদের পরিবারে নামাজও হয়, আবার পূজাও হয়। তাই আমি জানি, যদি কোনো সম্প্রদায়কে হেয় করা হতো, আমি এই ছবির অংশ হতাম না।”
তিনি আরও বলেন,
“‘হক’ কোনো ধর্মীয় প্রচার নয়, এটি এক নারীর ন্যায়ের লড়াইয়ের গল্প। ছবিতে আমরা দেখিয়েছি কীভাবে ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইন ও সাংবিধানিক আইনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা দরকার।”
ইমরানের মতে, ছবিটি শুধু মুসলিম সমাজ নয়, বরং পুরো ভারতের নারী-পুরুষদের জন্য এক অনুপ্রেরণার বার্তা বহন করে।
পরিচালনা ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম:
এই সিনেমার পরিচালক সুপর্ণ এস ভার্মা, যিনি এর আগে বেশ কিছু বাস্তবধর্মী সামাজিক ইস্যু নিয়ে কাজ করেছেন। প্রযোজনায় রয়েছেন বিনীত জৈন, বিশাল গুরনানি, জুহি পারেখ মেহতা ও হারমান বাওয়েজা। অন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভার্তিকা সিং, দানিশ হুসেইন, শিবা চাড্ডা এবং আসিম হাতাঙ্গাড়ি।
ছবিটি জঙ্গলি পিকচার্স ব্যানারে নির্মিত হয়েছে এবং মুক্তি পাবে ৭ নভেম্বর ২০২৫।
উপসংহার:
ইমরান হাশমির ‘হক’ শুধু একটি সিনেমা নয় - এটি এক নারীর আত্মসম্মান ও ন্যায়ের প্রতীক। শাহ বানোর মতো একজন নারী যেভাবে সমাজের রীতিনীতি ও ধর্মীয় প্রথার ভেতর থেকেও ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছিলেন, এই ছবিটি সেই সাহসের প্রতিধ্বনি।
ইমরানের কথায়-
“হক এমন এক গল্প, যা প্রতিটি ভারতীয়কে ভাবাবে - নারী, পুরুষ, মুসলিম বা হিন্দু - সবাইকে।”
FAQ (সাধারণ জিজ্ঞাসা):
১. ‘হক’ সিনেমাটি কবে মুক্তি পাবে?
বলিউড অভিনেতা ইমরান হাশমি ও ইয়ামি গৌতম অভিনীত ‘হক’ সিনেমাটি ৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ছবিটি জঙ্গলি পিকচার্স ব্যানারে নির্মিত।
২. সিনেমাটি কি বিতর্কিত হতে পারে?
ইমরান হাশমির মতে, ছবিটি ভারসাম্যপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে তৈরি হয়েছে। কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়কে আঘাত করা হয়নি; বরং এটি ন্যায়ের লড়াইয়ের গল্প।
৩. শাহ বানো মামলাটি কী ছিল?
১৯৭৮ সালে শাহ বানো নামের এক মুসলিম নারী ভরণপোষণের দাবিতে আদালতে মামলা করেন, যা ১৯৮৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে পরিণত হয় এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক চাপের মুখে নতুন আইন এনে তা বাতিল করা হয়।
৪. ‘হক’ কি বাস্তব গল্পের হুবহু রূপ?
না, এটি শাহ বানো ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত। কাহিনির আবেগ ও বার্তা বাস্তব, তবে কিছু দৃশ্য ও চরিত্র সিনেমাটিকভাবে সাজানো হয়েছে।
পোষ্ট ট্যাগ:
ইমরান হাশমি নতুন সিনেমা, শাহ বানো মামলা, হক মুভি, হক সিনেমা রিলিজ ২০২৫, ইয়ামি গৌতম, বাস্তব ঘটনার সিনেমা, মুসলিম নারী অধিকার, ইমরান হাশমি হক, বলিউড নিউজ ২০২৫, শাহ বানো কেস

