জ্বর ঠোঁসা একটি কমন সমস্যা। এ সমস্যার সম্মুখীন হননি এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। আজকে আর্টিকেলে ঘরোয়া প্রতিকার সহ জ্বর ঠোঁটা (Cold Sore / জ্বর ঠোষা) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
চলুন জেনে নেয়া যাক জ্বর ঠোঁটা (Cold Sore / জ্বর ঠোষা) এর কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে।
জ্বর ঠোঁটা (Cold Sore) কী?
জ্বর ঠোঁটা হলো ঠোঁট বা মুখের চারপাশে দেখা দেওয়া ছোট ছোট ফোস্কার মতো ঘা, যা সাধারণত Herpes Simplex Virus Type 1 (HSV-1) এর কারণে হয়। এটি একটি ছোঁয়াচে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা একবার শরীরে প্রবেশ করলে তা সারা জীবনের জন্য শরীরে থেকে যায় এবং সময় সময় সক্রিয় হয়ে ফোসকা তৈরি করে।
লক্ষণ (Symptoms)
সাধারণত নিচের ধাপগুলিতে লক্ষণ প্রকাশ পায়:
1. প্রাথমিক লক্ষণ (প্রথম ২৪ ঘণ্টা): ঠোঁট বা মুখের কোণায় চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা টানটান ভাব ও হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি।
2. ফোসকা ধাপ: ছোট ছোট জলভরা ফোসকা তৈরি হয় একাধিক ফোসকা একত্রিত হয়ে বড় হয়ে যেতে পারে।
3. ফাটা ও শুকানোর ধাপ: ফোসকা ফেটে যায় এবং তরল বের হয় তারপর সেখানকার জায়গা শুকিয়ে খোসা পড়ে যায়।
এই পুরো প্রক্রিয়া সাধারণত ৭–১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
পুনরাবৃত্তি / রিল্যাপস (Recurring Attacks)
HSV-1 ভাইরাস শরীরে একবার প্রবেশ করলে তা স্নায়ু কোষে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে এবং কিছু কারণেই পুনরায় সক্রিয় হতে পারে। যেমন:
১. জ্বর / ঠান্ডা লাগা
২. অতিরিক্ত স্ট্রেস বা উদ্বেগ
৩. অতিরিক্ত রোদে থাকা
৪. হরমোন পরিবর্তন (বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে)
৫. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
চিকিৎসা (Treatment)
মেডিকেল চিকিৎসা:
1. অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (ডাক্তারের পরামর্শে):
ক. Acyclovir
খ. Valacyclovir
গ. Famciclovir
2. অ্যান্টিভাইরাল ক্রিম:
ক. Acyclovir cream (দিনে ৫ বার ব্যবহার করা হয়)
খ. Docosanol cream
3. ব্যথা ও জ্বালাপোড়ার উপশম:
ক. প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন।
খ. ঠান্ডা পানিতে ভেজানো তোয়ালে বা বরফের সেঁক।
ঘরোয়া প্রতিকার (Home Remedies)
1. বরফ সেঁক (Cold Compress): ঠোঁটে বরফ বা ঠান্ডা তোয়ালে দিয়ে সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়।
2. হানি (Honey): প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক, সরাসরি ঘায়ে লাগালে দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
3. অ্যালোভেরা জেল: জ্বালাপোড়া কমায়, আরাম দেয়।
4. লিসাইন (Lysine) সাপ্লিমেন্ট / খাবার: দুধ, ডিম, মাছে বেশি পাওয়া যায়, ভাইরাস সক্রিয়তা কমায়।
5. চা পাতা বা টি ব্যাগ: ঠান্ডা করা ব্যবহৃত টি ব্যাগ ঠোঁটে চেপে ধরলে ব্যথা ও ফোলাভাব কমে।
যদি ১০ দিনের মধ্যেও সেরে না ওঠে, বা ঘা অনেক বড় হয়, বা চোখে সংক্রমণ হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তার দেখানো জরুরি।
প্রতিরোধ (Prevention Tips)
১. HSV-1 আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন (চুম্বন, একসাথে খাওয়া-দাওয়া)
২. নিজের লিপস্টিক, তোয়ালে, চশমা, ব্রাশ শেয়ার করবেন না।
৩. রোদে বাইরে গেলে সানস্ক্রিনযুক্ত লিপ বাম ব্যবহার করুন।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, ও স্ট্রেস কমান।
FAQ (প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন)
প্র: এটা কি সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে যায়?
উ: না, ভাইরাসটি শরীরে থেকে যায়, তবে চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিলে এটি অনেক সময় পর্যন্ত সক্রিয় হয় না।
প্র: এটা কি যৌন রোগ?
উ: HSV-1 সাধারণত মুখের মাধ্যমে ছড়ায়, কিন্তু HSV-2 (Herpes Type 2) যৌন সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়ায়। তবে ওরাল সেক্সের মাধ্যমে HSV-1 ও যৌনাঙ্গে ছড়াতে পারে।
পোস্ট ট্যাগ:
ঠোঁটে ফোসকা দূর করার উপায়? , ঠোঁটে জ্বর ঠোসা হলে কি করব? , জ্বরঠোসা কী?, জ্বরে ফোসকা পড়ার কারণ কি?, জ্বর ঠোসা দূর করার উপায় , জ্বর ঠোসার কারণ ও প্রতিকার , জ্বর ঠোসার ক্রিমের নাম, জ্বর ঠোসা সারানোর ঘরোয়া উপায়, ঘন ঘন জ্বর ঠোসা হওয়ার কারণ, জ্বর ঠোসার দাগ দূর করার উপায়, জ্বর ঠোসার ঔষধের নাম, ঠোঁটে জ্বর ঠোসা কেন হয়